Sunday 2 November 2014

কবিতা ৩

"এমনটি না হলেও পারতো!"
--------------------------
-ধন্যবাদ আপনাকে।
-কেন?
-এই যে এখানে এসেছেন কষ্ট করে।
-সে আর এমন কি। নিত্য কত সময় যাচ্ছে নষ্ট হয়ে।
-যাহোক বসুন তবে। চা চলবে?
-চলবে বৈকি দৌড়োবে। সম্ভব হলে এক গ্লাস জল?
-আচ্ছা বসুন।
'ঘরজুড়ে কিছু নেই শুধু কয়েকটা পুরনো বইপত্তর।শোবার জন্য ছোট একটা চৌকি। বহুদিনের পুরনো মখমলের চাদর বিছানো তাতে। মেহগনি কাঠের পড়ার টেবিল। কিছু ময়লা কাপড় চোপড়। একটা ফ্রেম ভাঙা চশমা আর কিছু ওষুধের পরিত্যক্ত অংশ।'
-এই নিন জল। চাও প্রায় প্রস্তুত।
-আচ্ছা আপনার কি বড় কোনো অসুখ?
-তেমন কিছু না। মাঝে মধ্যে একটু আধটু মাথা ব্যথা, এর বেশি কিছু নয়।
-শুধুই মাথা ব্যথা?
-ওদিকে চা বসিয়েছি।
'প্রসঙ্গ পাল্টে উঠে যান তিনি। ঘোর কাটে না আমার। আসলে কি শুধুই মাথা ব্যথা নাকি অন্য কিছু? গরম ধোঁয়া ওঠা আদা চা চলে এসেছে। সাথে এসেছেন তিনি।যাকে বোঝার মত ক্ষমতা সম্ভবত আমার নেই।'
-আপনার আর কেউ নেই?
-না,আছে তো। মা,বাবা,ভাই, বোন। ওহ না!  নেই। মরে গেছে সব।
-সত্যিই আমি দুঃখিত। জানতে পারি -কিভাবে?
-আমার কাছে রবি ঠাকুরের 'ঘরে বাইরে' বিভূতিভূষনের 'পথের পাচালি'সহ শ'খানেক বই আছে পড়বেন?
'একের পর এক প্রসঙ্গ পাল্টে যাচ্ছেন তিনি। কোন কিছুতেই ঠেই পাওয়া যাচ্ছে না।সব কথা বুকে পুষে রাখর দারুন ক্ষমতা তার আছে।'
-জানেন? খুব সখ ছিলো কটা কবিতা লিখবো।একটাও লেখা হয় নি। আমার ভেতর কবিতা আসেনি। কখনোই না।
-এখনো তো সময় পেরিয়ে যায় নি। লিখুন না।
-সময় কোথায়? আর মাত্র মাস দুয়েক। তারপর...।
'গলা ভারী হয়ে ওঠে তার। কথা না বাড়িয়ে বইয়ের তাকের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেই মেলে ফর্দটা। বাজারের নয়,ওষুধের। দুমাসের বেশি বাঁচবেন না তিনি আর। উঠে পড়া ছাড়া গতি থাকে না বলে তাই করতে হয়।'
-আজ উঠি। অন্যদিন কথা হবে।
-না। আর কথা হবে না কোনদিন। আজই আমি ফিরে যাবো। ফিরে যাবো আপন ঘরে।
-মানে?
'প্রশ্নের উত্তর আসে না। উত্তর দেবার মত অবস্থায় আর নেই উত্তরদাতা। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস গলা চিরে বেরোয় তার। তারপর থেমে যায় সব। ফিরে আসি।  ফিরে আসা ছাড়া করার থাকে না কিছুই।'

No comments:

Post a Comment